আমাদের সবার জীবনে অনেক সময় আমাদেরকে সীমিত সময়ের মধ্যে অনেকগুলো কাজ করতে হয়। তাই আমাদের জীবনে স্ট্রেস আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এত চাপ সত্ত্বেও তা সফলভাবে সামাল দেওয়ার মধ্যেই আপনার সাফল্য অর্জন হয়। এখানে স্ট্রেস সামাল দেওয়ার ৯টি উপায় তুলে ধরা হলঃ
১. নিজের প্রতি সদয় হোন
নিজের প্রতি সদয় হলে নিজের উপর আপনি বাড়াবাড়ি করবেন না। এবং আপনি নিজের ভুলগুলো বা ব্যর্থতাগুলোর জন্য নিজেকে দোষ না দিয়ে তা বোঝার চেষ্টার করবেন। যারা নিজেদের প্রতি সদয় হয় তারা বেশি সুখী, বেশি আশাবাদী এবং কম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। এবং তারা বেশি সফলও হয়ে থাকে। অনেকেই ভাবে ভাল কিছু করতে হলে নিজেকে সর্বদা কাজে লাগাতে হবে কিন্তু নিজের উপর এই বেশি বেশি চাপ সৃষ্টি করা ঠিক নয়। কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি একটু সদয় হলে চাপ সামাল দিয়ে কাজে উন্নতি করা সম্ভব। মনে রাখবেন মানুষ মাত্রই ভুল হবে, এতে নিজের উপর দোষ দেওয়ার কিছু নেই।
২. বড় কিছু চিন্তা করুন
আপনি যা চান বা যা আপনার দরকার তা অনেকভাবেই চিন্তা করতে পারেন। যেমন ব্যায়াম করার কথা চিন্তা করতে হলে আপনি বলতে পারেন যে আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান বা আপনি দুই মাইল করে দৌঁড়াতে চান। বড় পরিসরে চিন্তা করলে তা আপনাকে প্রেরণা যোগাবে এবং চাপ সৃষ্টি করবেনা কারণ আপনি ছোট ছোট কাজকে বড় কোন এক অর্থে ব্যবহার করবেন। যেমন কাজে এক ঘন্টা অতিরিক্ত থাকার মানে এই নয় যে আপনাকে এক ঘন্টা বেশি সময় ধরে অফিসের কাজ করতে হবে, এর মানে হল আপনি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খাটছেন – এভাবে চিন্তা করলে কাজের সময় কোন চাপ সৃষ্টি হবেনা।
৩. রুটিন মেনে চলুন
কোন কিছুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয় এবং তা মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এবং প্রতিদিন আমাদেরকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রুটিন করে এক দিনের মধ্যে আপনাকে যে কয়টি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। সকালে রুটিন করে নিন এবং রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তা মেনে চলুন তাহলে দেখবেন আপনার উপর চাপ অনেকটাই কমে আসবে। প্রতিদিনকার খুঁটিনাটি সিদ্ধান্তগুলোই আমাদের সময় সবচেয়ে বেশি নিয়ে নেয়, তাই কী খাচ্ছি বা কী পোশাক পরছি তা নিয়ে বেশি সময় নষ্ট না করা উচিত। আর তাই আমার পরার জন্য একটি কালো বা নীল রঙের স্যুট হলেই যথেষ্ট। রুটিন মাফিক চললে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায়”
৪. ৫-১০ মিনিট সময় নিয়ে মজার কিছু করুন
অল্প কিছু করলে যদি বিনিময়ে ভাল কিছু পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কী? নিজের কাছে যা মজা লাগে তা অল্প সময়ের জন্য করলে আপনার জন্য ভাল ফল বয়ে আনতে পারে। নিজের কাছে ভাল লাগে এমন কাজ করলে আপনি ক্লান্তি কাটিয়ে উঠবেন পারবেন এবং নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারবেন যা আপনার কাজের পারফরম্যান্সকে উন্নত করে। মনে রাখবেন নিজের কাছে ভাল লাগা আর তাতে মজা পাওয়া ও রিল্যাক্সড হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন লাঞ্চ বিরতিতে ভোজন করা আপনার জন্য রিল্যাক্সিং, খাবার যদি ভাল হয় তাহলে তা আপনার কাছেও ভাল লাগবে কিন্তু যদি আপনাকে খারাপ পরিবেশের মধ্যে খাওয়া সেরে নিতে হয়, তাহলে সেটা আপনার কাছে নিশ্চয়ই ভাল লাগবেনা। আর নিজের কাছে ভাল লাগে মানে এই নয় যে কাজটি করা সহজ হবে, কঠিন কাজ যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে সেটা করেও আপনি নতুন উদ্যম পেতে পারেন।
৫. কার্যতালিকায় কোথায় এবং কখন – এই ২টি বিষয় যোগ করুন
আপনার কী টু-ডু লিস্ট আছে? কখনও কী এমন হয়েছে যে দিন শেষে এক-দুইটি কাজ টু-ডু লিস্ট থেকে আপনি করতে পারেননি? এরকম হলে তা চাপ তৈরি করবে এটাই স্বাভাবিক। আপনাকে সময় মেনে দিনের সব কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এই জন্য বিকল্প পরিকল্পনা – এটা না হলে অন্যটা – করতে হবে। এর ফলে আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। আগে ভাগে চিন্তা করে সে অনুযায়ী কাজ করলে আপনি দ্রুত কাজটি শেষ করত পারবেন। এজন্য আপনার টু-ডু লিস্টের প্রতিটি কাজের সাথে কোথায় এবং কখন – এই দুইটি ধারা যুক্ত করুন। তাহলে আপনার মন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কাজ করার কথা সহজে মনে রাখতে পারবে। এর ফলে আপনার টু-ডু লিস্টে থাকা কাজগুলো আপনি সম্পন্ন করে চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
৬. ইতিবাচক ভাবনার জন্য যদি এটা না হয়ে এটা হয় – এই ধরনের মনোভাব রাখুন
চাপ সামাল দেওয়ার আরেকটা উপায় বিকল্প পরিকল্পনা রাখা, একটা না হলে আরেকটা হবে আর এতে আপনার উপর চাপও কমবে। গবেষণায় দেখা গেছে বিকল্প পরিকল্পনা থাকলে তা আমাদের আবেগীয় প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চাপ অনুভব করার চেয়ে আপনি কী ধরনের প্রতিক্রিয়া চান তা ঠিক করে নিন, যেমন কোন কাজের ডেডলাইন ঘনিয়ে আসলে আপনি উৎকন্ঠিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখবেন।
৭. কাজের অগ্রগতি দেখুন, কাজের পারফেকশন নয়
লক্ষ্য অর্জন করার প্রক্রিয়ায় আমাদের দুই ধরনের মনোভাব থাকেঃ প্রথম হল কাজে ভাল হতে হবে এই মনোভাব যেখানে আপনি নিজের সক্ষমতার উপর জোর দেবেন আর দ্বিতীয় হল কাজে ভাল করার মনোভাব যেখানে আপনি আপনার নতুন দক্ষতা শেখার উপর জোর দেবেন। প্রথম মনোভাব সম্পন্ন লোকেরা সব কাজেই পারফেকশন আনতে চায় এবং অন্যদের তুলনায় তারা কেমন করছে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু যখন সবকিছু ঠিকমত হয় না তখন তারা চাপের মধ্যে পড়ে এবং নিজের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকে। নিজের সক্ষমতার উপর প্রশ্ন করলে সেই লোক যে কাজে সফল হবেনা তা বলাই বাহুল্য। আর দ্বিতীয় মনোভাব সম্পন্ন লোকেরা নিজের প্রতি সদয় থাকে এবং সময়ের সাথে তাদের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে। যখন আপনি জানবেন যে আপনি ভুল করতেই পারেন এবং তা থেকেই আপনি শিখবেন ও নিজেকে উন্নত করবেন, তখন দেখবেন আপনার উপর মানসিক চাপ অনেকটাই কমে আসবে।
৮. এ পর্যন্ত যা যা অর্জন করেছেন তা মনে রাখুন
যত যাই হোক না কেন, উপযুক্ত কাজে যথার্থ অগ্রগতি করতে পারাটাই আসল। কাজের ছোট ছোট অগ্রগতি আমাদেরকে শত চাপের মাঝেও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়। যখন আমরা ভাবি যে আমরা ধীরে ধীরে কাজ করে আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখন তা আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেয়। তাই মূল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আগে আপনি কাজে কতটুকু অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছেন তা একবার হলেও ফিরে তাকিয়ে দেখুন।
৯. আশাবাদ নাকি আত্মরক্ষামূলক হতাশা – আপনার জন্য যেটা ভাল কাজ করে তা জেনে নিন
অনেকের জন্য প্রচুর কাজের মাঝে পজিটিভ থাকা সম্ভব হয় না। অন্যদের কাছে তা অভিশাপের মত মনে হয় কারণ তাদের জন্য আশাবাদ কোন ভাল ফল দেয় না। একেক জনের কাজ করার ধরন একেক রকম এবং তাদের কাজ করার প্রেরণা একেক রকম। কারো জন্য আশাবাদী হওয়া ফলদায়ক আবার কারো জন্য আত্মরক্ষামূলক হতাশা কাজে দেয়। আশাবাদী লোকেরা উৎসাহ নিয়ে নিজে থেকেই কাজ করে। আর আত্মরক্ষামূলক হতাশাবাদীরা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করে থাকে। যে যেভাবেই করুক না কেন, কাজ করাটাই হল মূল কথা। আর কাজ করে ফেলা মানে চাপমুক্ত হওয়া।