চাহিদা অনুযায়ী সৃজনশীল হতে পারছেন না? খুব বেশি লোক এটি পারেনা। তবে চিন্তার কিছু নেই। সৌভাগ্যবশত এটি একটি দক্ষতা যা আপনি উন্নত করতে পারেন।
বিশ্বাস হচ্ছে না? এক্ষুনি একবার চেষ্টা করে দেখুন। সৃজনশীল কিছু চিন্তা করুন। সম্পূর্ণ নতুন এবং ভিন্ন কিছু নিয়ে আসুন। যে কেউ এটা চেষ্টা করতে পারে।
সৃজনশীলতা কোন সুইচ নয় যা আমাদের অধিকাংশই ইচ্ছা অনুযায়ী চালু করতে পারে। সুতরাং, সৃজনশীলতার চাবিকাঠি হল কোন একটি সমস্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। প্রয়োজন আবিষ্কারের জননী, তাই একটু কৃত্রিম প্রয়োজন তৈরি করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃজনশীলতা উদ্দীপকের কাজ করে।
এখানে আপনার উদ্ভাবনী সুইচ টোকার কয়েকটি সহজ উপায় আছে।
১) সবচেয়ে খারাপ যা ঘটতে পারে সেটা ভাবুনঃ
আপনি যদি আপনার সবচেয়ে বড় গ্রাহক হারান তবে কী হবে? কী হবে যদি আপনার ব্যবসা তলিয়ে যায়? কী হবে যদি আপনার একটি প্রধান প্রতিদ্বন্দী বাজারে প্রবেশ করে?
এর উত্তর আপনার সামনে অপ্রত্যাশিত সুযোগের আবরণ উন্মোচন করতে পারে, অথবা আপনার সামগ্রিক কৌশলে পরিবর্তন আনতে পারে।
২) “কেন?”-এই খেলাটি খেলেনঃ
পাঁচটি “কেন?” হল মূল কারণ বিশ্লেষণ যন্ত্রাংশের একটি সাধারণ মানদণ্ড। মূল কথা হল প্রশ্ন করতে হবে “কেন?”, যে কোন ভুলের আশানুরূপ আসল কারণটি খুঁজে বের করার জন্য অন্তত পাঁচবার এ প্রশ্ন করতে হবে।
কিন্তু আপনাকে একটি ভুলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আপনি একটি সাম্প্রতিক অভ্যাস বা আচরণ বেছে নিন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনি এটা কেন করেন। বারবার জিজ্ঞাসা করতে থাকুন, আপনি এটা কেন করেন। আপনি যত বেশি বার নিজেকে প্রশ্ন করবেন, প্রতিটি উত্তরের পর আপনি সবকিছু আবার নতুনভাবে দেখতে শুরু করবেন।
৩) নিজেকে এমন ভাবুন যে আপনার সব অর্থ ফুরিয়ে গেছেঃ
নিরেট অর্থপ্রবাহ বেশ ভাল। কিন্তু আয়ের একটি সুষম স্রোত অথবা সুষম মূলধন অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ বা কোন অনুকূল প্রক্রিয়াকে লুকাতে পারে।
যদি আপনার সব অর্থ ফুরিয়ে যায়, তবে আপনাকে কী করতে হবে? আপনি যতোগুলো সম্ভব পরিস্থতি চিন্তা করুন এবং সবচেয়ে ভাল ধারণাটি বাস্তবায়ন করুন। যখন আপনার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে এবং আপনার মনে হবে যে আর কোন উপায় নেই, তখন আপনি ‘সেক্রেড কাউ’(পবিত্র গরু) টি, অর্থাৎ অলঙ্ঘনীয় বস্তুটি খুঁজে বের করুন; মনযোগ দিন তাতে যেটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সত্যিই একটি ভিন্নতা নিয়ে আসতে পারে।
৪) এমন ভান করুন যেন কোন নিয়ম নেইঃ
প্রতিটি ব্যবসায়ে লিখিত এবং অলিখিত নিয়ম রয়েছে। এবং প্রত্যেকে স্ব-আরোপিত নিয়ম অনুসরণ করে।
কিন্তু আপনি কী করতেন যদি একটি সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি প্রচলিত নির্দেশাবলী না ব্যবহার করতে পারতেন? আপনার যদি অনুমতি নেয়ার মত কেউ নাই থাকতো তাহলে? যদি আপনার সঙ্গী আপনার জামিন করাতে না পারতো বা আপনাকে আড়াল করতে না পারতো তাহলে? আপনি যদি আপনার কর্মচারী প্রশিক্ষণ এবং বিকাশ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারতেন তাহলে?
মানসিক ভাবে কিছু নিয়ম ভাঙ্গুন, বিশেষত সেগুলো যদি আপনার নিজের নিয়ম হয়।
কখনও দেখবেন একটি ‘নিয়ম’ কোনও নিয়মই নয়, সেটি শুধুমাত্র একটি উপায় যা দ্বারা আপনি কাজ করেন মাত্র।
৫) মনে করুন যে সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার কাছে মাত্র পাঁচ মিনিট আছেঃ
গতিও সৃজনশীলতার জননীস্বরূপ। একটি সমস্যা বেছে নিন এবং পাঁচ মিনিটে তার সমাধান করার জন্য নিজেকে জোড় করুন।
ধরুন একটি অর্থপ্রবাহ সংকটকালে আপনাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনাকে যদি এক্ষুনি কিছু করতে হয়, আপনি কি করতেন?
বহুবিধ পরিস্থিতিতে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া বা আগাছার মাঝে হারিয়ে যাওয়া খুব সহজ। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত কখনো কখনো সঠিক হতে পারে, কেননা সেটা একেবারে ইস্যুটির গভীর থেকে নেয়া হয়।
৬) কোনকিছুর উৎকৃষ্টটি কল্পনা করুনঃ
নিজেকে বলুন যে আপনি আপনার কার্যপ্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন করতে চান। আমরা শতকরা অর্জন অনুযায়ী আচরণ উন্নত করার জন্য প্রশিক্ষিত হইঃ ৩% খরচ কমানো, কাজের পুনরূক্তি ৪% কমানো ইত্যাদি।
কিন্তু আপনার লক্ষ্যটি যদি নিখুঁত করার প্রয়োজন পড়তো, তাহলে? কোনো কিছু যদি ঠিক করতে হতো, আপনাকে ঠিক কী করতে হতো? এর একটি উদাহরণ দেখা যেতে পারে।
একজন উদ্যোক্তা বাজেট চক্র তৈরীর আগে একজন মেশিন অপারেটরকে ৩% উৎপাদনশীলতা কিভাবে বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা আছে কিনা না জিজ্ঞেস করে এর বদলে জিজ্ঞেস করল যে, মেশিন যাতে অপ্রত্যাশিতভাবে খারাপ না হয়ে যায় তা যদি তোমাকে নিশ্চিত করতে হয়? তাহলে আমাদের কী করতে হত? সে তখন মেশিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুমেয় প্রতিটি কারণ বের করে তার তালিকা তৈরি করল। পরে তিনি সেই কারণগুলো দূর করার উপায় খুঁজে বের করলেন।
তারপর তিনি তার ধারণাগুলো বাস্তবায়ন করেন। তারা অনেকগুলো পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। তারা অন্য একজন কর্মচারি নিয়োগ করে যে দুপুরের খাবারের বিরতিতে সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে, এবং এতে করে অনেকগুলো জিনিসের ব্যবহার বেড়েছিল। তিন মাসের মধ্যে তাদের উৎপাদনশীলতা ৩২% বেশি হয়ে গিয়েছিল এবং বাড়তি ব্যায়ের বিনিয়গের উপর আয় ছিল ৮০০% এর বেশি।
৭) ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা তৈরি করে দেখুন বা অন্যভাবে কাজ করুনঃ
উদ্ভাবনের বিশেষজ্ঞগণ ক্রমাগত পরীক্ষণ সুপারিশ করেন। কিন্তু একটি পরীক্ষণের কথা চিন্তা করলে কতগুলো সৃজনশীল স্তর প্রয়োজন, যেগুল প্রায়শই নিয়ন্ত্রণ করা যায়না।
আপনি এমন একটি কাজ ধরুন যা ভালভাবে কাজ করে। তারপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমস্যা তৈরি করুন এবং দেখুন কী হয় (এমন একটি কাজ নিন যাতে অর্থ ব্যয় হয় না বা গ্রাহকের সাথে সম্পর্কের মাঝে কোন প্রভাব না ফেলে)।
যেমন হতে পারে প্রথমে আপনি প্রতিদিন আপনার ই-মেইল চেক করতে পারেন। তারপর দেখুন আগামীকাল কী হয়? আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে খেয়াল করুন, অন্তত একটি সুবিধা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি আপনার কর্মচারীদের মাঝে একটু বেশী নিজের গুরুত্ব দেখতে পাবেন। কিংবা আপনি এমন কিছু কাজ করে ফেলতে পারছেন যা তাদেরকে দিনের কাজ সহজ ও তাড়াতাড়ি করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
তাই একটু ঘুরিয়ে কাজ করুন এবং যেটি কাজ করে সেটিই বেছে নিন।
৮) অন্যদেরকে দেখুন…তাদের কাছ থেকে শিখুনঃ
শিল্প ক্ষেত্রে পারষ্পরিক উন্নয়ন খুব কম হয় কারণ আমরা স্বভাবতই নিজেদের গণ্ডির মাঝেই থাকি। একজন আইনজীবী বন্ধু একজন সফল খুচরা বিক্রেতাকে দেখে শিক্ষা নিতে পারে যে কিভাবে তার ফার্ম এ মক্কেল এর দেখা পাওয়া যাবে।
একজন ভারী যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক তার কারখানার নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য প্রতিমাসে অন্যান্য বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন।
কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ কোনকিছু খুব ভালভাবে করছে। তাহলে আপনার ব্যবসায়ে কেন নয়? আপনি অন্যের ধারণা থেকে যা ধার করবেন তা আপনার কাজে সৃজনশীলতার প্রকাশ হতে পারে।
[অনুবাদ]