বিরোধ অবশ্যই অস্বস্তিকর তবে তা এড়িয়ে যাওয়াটাও বড় ধরনের ভুল। কঠিন আলাপে নিজেকে জড়াতে হলে এই কৌশলগুলোকে কাজে লাগান।
ধরুন আপনার এক নিকট আত্মীয় আছে যার একটি চাকরির ভীষণ দরকার। আপনি জানেন কাছের মানুশদের নিয়ে কাজ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু তবুও আপনি সেই আত্মীয়কে আপনার কোম্পানিতে চাকরি দিলেন। এরপর বছরের পর বছর চলে গেল, কিন্তু দেখা গেল সবার মধ্যে আপনার আত্মীয়রই কাজের মান একাবারেই সন্তোষজনক নয়। এর মানে হল এখন সময় এসেছে আপনার আত্মীয়কে আপনার কোম্পানির চাকরি থেকে বিদায় জানানোর। তবে আপনি তা করতে পারছেন না কারণ সে আপনার নিকট আত্মীয়। এরকম অনেক অন্তর্ঘাত উদ্যাক্তাদের সহ্য করতে হয় কারণ তারা কঠিন আলাপ সারতে চান না। একজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করার আগে ব্যবসার মালিকদের মধ্যে অনেকেই ইতস্তত বোধ করার পরে ব্যাপারটিকে ঝুলিয়ে রাখে। যতই কঠিন হোক না কেন, আলাপ সেরে নেওয়াটাই উত্তম কারণ আপনার হাতে করার মত আরো অনেক কাজ রয়েছে, তাই না? এসব কঠিন আলাপ এড়িয়ে গেলেই বরং অস্বস্তি ও সমস্যা আরো বাড়বে। আমরা সাধারণত কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আগেই সেটা নিয়ে ভাবা শুরু করি, যদি এটা হয় কিংবা যদি এটা না হয়, এই যদির বেঁড়াজালে কিন্তু মনে হতে পারে আলাপ না করাটাই বোধ হয় ভাল হবে। তাই আমরা অজুহাত সৃষ্টি করি এবং ভাবি যে হয়ত একদিন আপনা আপনি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। যদি আপনার সামনেও কোন কঠিন আলাপ সেরে ফেলার মত পরিস্থিতি থাকে, তাহলে এই পয়েন্টগুলো বিবেচনা করে দেখুন, হয়ত আপনার জীবন তাতে সহজ হয়েও যেতে পারে।
শুধুমাত্র আপনি একাই অখুশি বা অসন্তুষ্ট নন
যখন কোন কর্মচারী কাজে ভাল করছে না বা কোন পার্টনারশিপ ফলপ্রসু হচ্ছে না, তখন হয়ত আপনার মত অন্য পক্ষও এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকতে পারে। সবাই তাদের কাজে সাফল্য পেতে চায়। যে কাজে ভাল করছে না সেও কিন্তু তার কাজের মান সম্পর্কে সন্তুষ্ট থাকে না। এই অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে ঐ ব্যক্তি ভুল চাকরি করছে বা তাদের মন মত ক্ষেত্রে কাজ করতে পারছেনা। মনে রাখবেন আপনি যেমন অখুশি অন্য পক্ষও অখুশি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই উচিত আন্তরিকভাবে কথা বলে কাজের ইতি টেনে নিজেদেরকে মুক্ত করে নেওয়া।
মুদ্রার অন্য পিঠও রয়েছে
অসন্তুষ্টির কারণে নিজেদের আবেগের বশবর্তী হওয়াটা খুব সহজ। হয়ত আপনি ভাবতে পারেন একজনের আচরণ সম্পর্কে আপনি অবহিত কিন্তু বাস্তবে আপনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আলাপের সময় নিজের অবস্থানের ব্যাখ্যা ও অন্যদের দোষ দেওয়ার চেয়ে বরং অন্য পক্ষকে প্রশ্ন করুন। হয়ত এর ফলে আপনি এমন কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন যাতে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যায়। আপনার মা হয়ত কাজের সময় আপনাকে কল করে থাকেন কারণ তিনি ভাবেন আপনি যখন ঘরে বিশ্রাম নেন সেই সময়ে আপনাকে বিরক্ত না করে বরং কাজের সময় আপনার সাথে কথা বলাটা ভাল হবে। এতে আপনি তার উপর বিরক্ত হতেই পারেন, কিন্তু আপনার মাকে ভালভাবে ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান কিন্তু সহজেই করা সম্ভব।
এবার ভাবুনঃ এই বিলম্বের ফলে আপনার কী কী ক্ষতি হচ্ছে ?
কঠিন পরিস্থিতি ঝুলিয়ে রাখার মানে হল সময়, অর্থ ও শক্তির অপচয়। হয়ত আপনি ভাবতে পারেন যেভাবে চলছে চলুক না, কিন্তু আপনার ভেতরকার অসন্তুষ্টিই কিন্তু পরবর্তীতে আপনাকে সমস্যায় ফেলে দেবে। কঠিন পরিস্থিতির ফলে আপনার আর্থিক কত ক্ষতি হচ্ছে সেদিকে নজর দিন। কাজে হস্তক্ষেপ, ঝামেলাপূর্ণ সম্পর্ক, কর্মচারীদের কাজের নিম্নমান ও ফলপ্রসু নয় এমন পার্টনারশিপ – সবকিছুই আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে ফেলবে। এ ব্যাপারে এক সপ্তাহ ধরে নোট করে রাখুন। এই ঝুলন্ত পরিস্থিতির ফলে আপনার কাজে কতটা ব্যাঘাত ঘটছে? এর ফলে কী আপনার ব্যবসার সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে? যা আপনার করার কথা নয় এমন কোন কাজেও কী আপনাকে নজর দিতে হয়? এবং এ ব্যাপারটি নিয়ে বারবার চিন্তা করার ফলে আপনি কতটা সময় নষ্ট করছেন? যখন আপনি এই ব্যাপারগুলো হিসাব করে দেখবেন, তখন পরবর্তী ধাপগুলো আপনার কাছে আর কঠিন মনে হবে না। সব সমস্যার তালিকা করে এর ভাল-মন্দ যাচাই করে দেখুন। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে অন্য কোন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন যার পেশাদারি চিন্তাধারা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
[অনুবাদ]