১৪টি ইন্টারভিউ প্রশ্ন এবং এগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ
১. আমরা যদি আমাদের গত এক বছরের পর্যালোচনা নিয়ে কথা বলি, সেক্ষেত্রে আপনি কী বলতে পারবেন আমাদের অর্জনগুলো কী ছিল?
ইন্টারভিউয়ে শুধু প্রশ্নকর্তাই নন, চাকরি প্রত্যাশীদেরও প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাটা জরুরি। এর ফলে চাকরিদাতা বুঝতে পারবে যে আপনি প্রতিষ্ঠান এবং কী কাজ করতে হবে সে সম্পর্কে ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন এবং তারা এও নিশ্চিত হবে যে আপনি সত্যিই চাকরিটি করতে চান। শুধু এক বছরের পর্যালোচনাই করাই যথেষ্ট নয়, প্রার্থীর মধ্যে দূরদৃষ্টি থাকতে হবে, যা প্রমাণ করবে যে সে প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত।
২. জীবনে আপনি কখন সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট ছিলেন?
এন্ট্রি লেভেলের প্রার্থী ব্যতীত, চাকরিদাতারা অন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও বিচক্ষণতা আশা করে। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্মার্ট লোকেরা তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারে এবং নতুন পরিবেশে ভাল করতে পারে। তাই চাকরিদাতারা প্রার্থীদের চরিত্রের দিকে খেয়াল রাখেন এবং দেখেন যে তা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সাথে কতটা মানানসই। এর প্রশ্নটির মাধ্যমে চাকরিদাতারা জানতে চান যে প্রার্থী কিসে খুশি হয় এবং অন্য কোম্পানির চেয়ে সে তাদের প্রতিষ্ঠানে কীভাবে খুশি থেকে কাজ করতে পারবে।
৩. ধরুন আপনাকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী সম্মানী সহকারে নিয়োগ দেওয়া হল এবং আপনি আপনার কাজকে ভালবেসে ফেললেন, এমতাবস্থায় অন্য আরেকটি কোম্পানির কী ধরনের অফার আপনাকে আকৃষ্ট করতে পারে?
এই প্রশ্নটির মাধ্যমে চাকরিদাতারা জানতে চান যে প্রার্থীর কাছে তাদের কর্মস্থল নাকি টাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কি আদৌ অন্য কোন কোম্পানি বেশি টাকায় কিনে নিতে পারবে কিনা? এ ব্যাপারে প্রার্থীদের উত্তর অনেক চাকরিদাতাদেরকেই আশ্চর্যান্বিত করে থাকে।
৪. আপনার আদর্শ কে এবং কেন?
এই প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নয়ন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠে যা সাফল্য এবং উচ্চাশার জন্য বেশ সহায়ক। এছাড়াও প্রার্থী কোন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং আচরণ পছন্দ করে তা বোঝা যায়।
৫. কী করতে আপনার ভাল লাগে না??
চাকরিদারা ভাবেন যে একজনকে চাকরি দিয়ে দিলে সে চাকরির সবকিছু পছন্দ করতে শুরু করবে, কিন্তু সব সময় তা হয়ে উঠে না। প্রার্থীরা এই প্রশ্নের সদুত্তর নাও দিতে পারে, তাই এর প্রশ্নটি অনেক চাকরিদাতা বিভিন্ন ভাবে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে থাকেন এবং মাঝে মাঝে প্রার্থীরা সদুত্তর দিয়ে থাকে। কোন সেলসম্যান হয়ত বলবে যে সে নতুন মানুষের সাথে মিশতে আগ্রহী নয় বা কোন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়ত বলবে সে তার কাজ বার বার চেক করতে পছন্দ করে না। তখনই চাকরিদাতারা বুঝে যায় কাকে নেওয়া ঠিক হবে আর কাকে নেওয়া ঠিক হবে না।
৬. আপনার মতে আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অর্জন সম্পর্কে বলুন।
এই প্রশ্নটি অন্য আরো কিছু নতুন প্রশ্নের দ্বার খুলে দেয় এবং প্রার্থীকে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ করে দেয়। চাকরিদাতা অতিরিক্ত প্রশ্নও করতে পারে যেমনঃ এই অর্জনের সময় আপনি কোন পদের দায়িত্বরত ছিলেন? এর ফলে ঐ কোম্পানির বৃদ্ধির উপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছিল? আর কে কে আপনার সাথে ছিল এবং এই অর্জন আপনার দলের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল? একটি নির্দিষ্ট অর্জন নিয়ে কথা বললে খুব সহজে অতিরিক্ত তথ্য এবং প্রার্থীর ব্যাপারে আরো ভালভাবে জানা যায়। বিশেষ করে তাদের কাজের অভ্যাস এবং তারা কীভাবে অন্যদের সাথে কাজ করে সে ব্যাপারে।
৭. আপনি কীভাবে…
এভাবে ইন্টারভিউয়ের অনেক প্রশ্নই শুর হতে পারে। বেশ কিছু চাকরিদারা আছেন যারা ইন্টারভিউকে বাধাধরা প্রক্রিয়া হিসেবে না দেখে একটি আলাপের ক্ষেত্র হিসেবে দেখে থাকেন, তাই তারা ইন্টারভিউয়ে নিজেদের মত করে প্রশ্ন করতে ভালবাসে। সব প্রতিষ্ঠানই উদ্দীপ্ত, সুশৃংখল, ভাল মানসিকতা সম্পন্ন ও দক্ষ ব্যক্তি চায়, তাই চাকরিদাতারা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারে। তারা প্রার্থীর চোখের দিকে তাকিয়েও তাকে বিশ্বাস করা শুরু করতে পারে কারণ বলা হয় যে চোখ খুব কম সময়েই মিথ্যা আভাস দিয়ে থাকে।
৮. আপনার সুপার পাওয়ার কী বা আপনার ভেতরে কী ধরনের শক্তি রয়েছে?
ইন্টারভিউয়ের সময় চাকরিদাতারা প্রার্থীদেরকে তাদের প্রিয় প্রাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। কোন প্রার্থী উত্তরে বলতে পারে যে চিতাবাঘ তার প্রিয় প্রাণী কারণ এটি বেশ ক্ষীপ্র হয়ে থাকে। তখন চাকরিদাতা বুঝে নিতে পারবে যে প্রার্থীকে দিয়ে ক্ষীপ্র গতির কাজ করানো সম্ভব। এবং পরবর্তীতে প্রার্থী দক্ষতার সাথে ঐ চাকরিতে বছরের পর বছর কাটিয়েও দিতে পারে।
৯. এই কয়েক বছরে আপনার এতগুলো চাকরি থাকার কারণ কী?
এই প্রশ্নের মাধ্যমে চাকরিদাতারা প্রার্থীর অতীত কাজের পূর্ণ ইতিহাস জানার চেষ্টা করে। কিসে প্রার্থীটি উদ্বুদ্ধ থাকবে, কেন সে এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে স্থানান্তর করল এবং কী কারণে তারা একটি চাকরি ছেড়ে দিল – এসব কিছু চাকরিদাতারা জানতে চায়। প্রার্থীদের উত্তরের মাধ্যমে চাকরিদাতার তাদের বিশ্বস্ততা এবং ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়া যাচাই করে থাকে। এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে যাওয়া দোষের কিছু নয়, কেন চাকরি ছাড়া হল, সেই কারণটাই গুরুত্বপূর্ন।
১০. আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জিনিসকে আরো ভাল, আরো দ্রুত, আরো স্মার্ট আর আরো কম খরচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে থাকি। অন্য কথায়, আমরা কম সময়ে বেশি কাজ করতে চাই। এমন কোন সাম্প্রতিক কাজ বা সমস্যা যা আপনাকে আরো ভাল, দ্রুত, বা স্মার্ট বানিয়েছে সে ব্যাপারে বলুন।
ভাল প্রার্থীরা এই প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর দিতে পারে। আর যোগ্য প্রার্থীরা তাদের উত্তর দেওয়ার জন্য উদ্বেলিত হয়ে উঠবে। কেউ হয়ত বলবে যে তারা গত এক দশকে তাদের পণ্যের দাম মাত্র একবার বাড়িয়েছে, এর মানে এই নয় যে তাদের খরচ কমে গিয়েছিল, এর মানে হল যে তাদের পুরো দল আরো ভালভাবে কাজ করতে পারার কারণেই তারা তাদের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখতে পেরেছিল। প্রত্যেক প্রার্থীই চাকরিদাতাদেরকে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজস্ব ঢঙে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে।
১১. আপনার পূর্বের চাকরি করাকালীন আপনার নির্দিষ্ট কোন অর্জন সম্পর্কে বলুন যা থেকে বোঝা যাবে যে আপনি এই পদেও উন্নতি করতে সক্ষম।
অতীতের পারফরম্যান্স সাধারণত ভবিষ্যত সাফল্যের মাপকাঠি। যদি প্রার্থী তার আগের কাজে তেমন কোন সাফল্যের কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়, তাহলে হয়ত চাকরিদাতার প্রতিষ্ঠানেও তাদের তেমন কোন সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা নেই।
১২. আপনার সম্পর্কে বলুন।
এই প্রশ্নটি প্রার্থীকে তার নিজের কথা বলার সুযোগ করে দেয় এবং এই প্রশ্নের কোন সঠিক ভা ভুল উত্তর নেই। প্রার্থী যা বলবে তাই। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রার্থী তার সৃজনী শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে কারণ এখানে সঠিক বা ভুল উত্তর নিয়ে ভাবতে হয় না। এতে চাকরিদাতা প্রার্থীর চরিত্র, কল্পনাশক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তি সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। এর প্রশ্নটির উত্তর একটি গল্পের আকারে হতে পারে এবং আজকের যুগে যেখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সবাই নিজের বিপণন নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে একটি গল্প বলার মাধ্যমে যেকোন ব্র্যান্ডের [হোক তা কোন পণ্য বা কোন ব্যক্তি] বিপণন করাটা মন্দ নয়। এই প্রশ্নটি করার সময় প্রার্থীর অভিব্যক্তিও চাকরিদাতারা খেয়াল করে থাকে। যদি প্রার্থী আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে, অস্বস্তিতে পড়ে যায় বা কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে যায়, তখন চাকরিদাতারা ধরে নেয় যে প্রার্থীটি উদার মনস্ক এবং চটপটে নয় যেমনটা প্রতিষ্ঠানের জন্য দরকার।
১৩. আপনার কী কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আছে?
চাকরিদাতারা অনেক সময় এই প্রশ্নটি করে থাকে প্রার্থীর চিন্তাশক্তি যাচাই করে দেখার জন্য যাতে তাদের প্রস্তুতির মান এবং কৌশলগত চিন্তাধারা প্রতীয়মান হয়। অনেক চাকরিদাতা মনে করে যে কাউকে তার উত্তর দিয়ে নয় বরং তার প্রশ্ন দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত।
১৪. আপনি যেমনটা চেয়েছিলেন কিন্তু তেমনটা পাননি এরকম এক সময়ের ব্যাপারে বলুন, হতে পারে আপনি একটি পদোন্নতি চেয়েছিলেন কিন্তু তা হয়নি বা একটি কাজ আপনার আশানুরুপ হয়নি।
এই প্রশ্নটি সহজ কিন্তু এর উত্তরে অনেক কিছু বলার থাকতে পারে। প্রার্থী হয়ত বলতে পারে তারা দলগত কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত কিন্তু তার মানে এই নয় যে যারা আসলেই একটি দলের মধ্যে থেকে ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম। চাকরিদাতারা এমন লোক চায় যারা নিজে থেকেই একটি কাজ শুরু করবে এবং নিজেকে কাজের অংশীদার মনে করবে। এক্ষেত্রে মূলত ১) লজ্জা ২) ব্যক্তিগত অসহযোগ বা ৩) উন্নয়নের সুযোগ এই তিনটি ভিত্তির আলোকে প্রার্থীরা উত্তর দিয়ে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানই লক্ষ্য পূরণে এবং একই সাথে অনেক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দায়িত্বের বাইরে গিয়েও কাজ করতে সক্ষম এমন লোকদের চায় যাদের মধ্যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যদি প্রার্থী অন্য কাউকে দোষারোপ করে, পূর্ব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলে বা এমন ভাবে কথা বলে যে তারা কাজের অংশীদার হতে রাজি নয়, তাহলে চাকরিদাতা বুঝতে পারবে যে প্রার্থী তার প্রতিষ্ঠানে ভাল করতে পারবেনা। তবে তারা যদি নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তাদের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী হয়ে থাকে, তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারবে।