শব্দটা শুনতে নীরস হলে কি হবে, ভদ্রতা আর শিষ্টাচার, বিশেষ করে ব্যবসার একটা অপরিহার্য অংশ। শিষ্টাচার শব্দটা অনেকটা লোক দেখানো বা বিরক্তিকর শোনায়। আর সমাজে চলার যত নিয়ম-কানুন আছে সেগুলো ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর আঘাত করে।
ভদ্র আচরণ এখনও অনেক কাজে দেয়, বিশেষ করে ব্যবসায়। আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভদ্রতা জ্ঞানকে প্রায় বিলুপ্ত করে দিয়েছে। তবে আমাদের এখন নতুন কারও সাথে কথা বলার আগে অনেক বেশি চিন্তা করে নিতে হয়।
শিষ্টাচার মানুষকে সম্মানের জন্য করা হয়, তাকে বিভিন্ন বাধা নিষেধের মধ্যে ফেলার জন্য নয়। আসুন দেখে নেই ব্যবসায়িক ভদ্রতার কয়েকটি নমুনা।
১। ধন্যবাদ জানানোঃ
সব কাজের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানান। ছোট্ট একটা নোট পাঠানোর মাধ্যমে আপনি মানুষের কাছে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন। চাকরীর ইন্টারভিউ হোক বা মিটিং হোক বা কাস্টমারের সাথে দামাদামি হোক, সবকিছুর পর আপনি যদি নিজের উপকার চান তবে ধন্যবাদ দিয়ে একটা নোট লিখুন। আপনার আর আপনার কোম্পানির ইমেজ আরও সুন্দরভাবে প্রকাশ পাবে।
২। নাম জেনে নিনঃ
আপনার সহকর্মী বা অধিনস্তদের নাম জেনে নেওয়া, ক্রেতা বা প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার মতই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কোম্পানির লোকেদের নাম জেনে নিন, তাদের সাথে কথা বলুন। তারা ঠিক কোন কাজ করছে সেটা না দেখে, সবাইকে সম্মান দেখান। চাকরীতে আজকাল আমরা উপরওয়ালাদের খুশি করতেই ব্যস্ত থাকি। তবে আপনার কোম্পানিতে যারা কাজ করছে, তাদের কেও প্রাপ্য সম্মান দিন। মনে রাখবেন আপনার নিচে যারা আছে তারাই আপনাকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে।
৩। “এলিভেটর নিয়ম” মেনে চলুন।
কোন ক্রেতা বা সম্ভাব্য পার্টনারের সাথে মিটিঙের পর, এলিভেটর দিয়ে নিচে নেমে বিল্ডিং থেকে বের হওয়ার আগে আপনার সহকর্মীদের সাথে মিটিং এর ব্যাপারে কোন কথা বলবেন না। আপনি যদি লিফটে একা থাকেন তাও না। কুসংস্কার বলেন বা নম্রতা বলেন, ফট করে কোন বেফাঁস কথা বলে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই নষ্ট করতে যাবেন না। ব্যপারটা “ফ্রেশ রুমে” এও প্রযোজ্য।
৪। মুখের দিকে তাকান, স্ক্রীনের দিকে নয়:
আজকাল মনোযোগ ধরে রাখা খুব কষ্টের কাজ। ইমেইল, মোবাইলে ফোন সবসময় আসতে থাকে। আমাদের ধারণা, একসাথে অনেক কাজ করলে বুঝি নিজের দক্ষতা বাড়বে। আপনি যখন কোন মিটিঙয়ে থাকবেন বা কারও কথা শুনবেন, তখন ভুলেও অন্যদিকে মনোযোগ দেবেন না। ঠিক মত কথা শুনুন আর এরপর বাকি কাজ করুন। এককাজের সময় অন্য কাজ করতে গেলে ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাছাড়া আপনি যার কথা শুনছেন না তাকে অপমান করা হয়। মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন, সফলতা বাড়বে।
৫। ভাল-মন্দ বিচার করতে যাবেন না।
আমরা কেউ নিখুঁত নই। সবারই কিছু ব্যাপার আছে যেগুলো শোধরানো দরকার। আজকের দিনে ভদ্রতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ হল, অন্যের সমালোচনা না করা। কারও সাথে আপনার মতভেদ হতেই পারে। কিন্তু সবাই সবার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছে, এই বিশ্বাস রাখুন। নিজের কাছে কি ভালো লাগলো সেটার উপর ভিত্তি করে অন্যকে বিচার করতে যাবেন না। শুধু নিজের কাজের দায়িত্ব নিন। ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কাজে আজকাল মানুষ সবসময় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সবাই চায় কাজের ক্ষেত্রে বা পরিবারের ক্ষেত্রে সবাই তাকে পছন্দ করুক।
ডিজিটাল যুগে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন না আপনি কাউকে আঘাত করছেন কিনা। আসলে শিষ্টাচার কয়েকটি নিয়ম, কিছু কাজ আপনি করবেন আর কিছু করতে পারবেন না, ব্যাস। এখন থেকে কাউকে ট্যাগ করে কোন পোস্ট দেওয়ার আগে, বা মিটিং এর মাঝখানে মেসেজ পাঠানোর আগে চিন্তা করে দেখুন, কাউকে অপমান করছেন না তো? আর মনে রাখবেন কাগজে-কলমে লেখা দুইটি লাইন, ইন্টারনেটে দেওয়া দশ পৃষ্ঠার চেয়েও দামি।
[অনুবাদ]