কখনও ভেবে দেখেছেন কী যে আপনি যেভাবে এক সময় আপনার বস সম্পর্কে কথা বলতেন একই ভাবে আপনার কর্মচারীরাও হয়ত আপনার ব্যাপারে কানাঘুষা করে থাকে?
আপনি মুক্ত দুয়ার (open door) নীতি অনুসরণ করে থাকতে পারেন যার ফলে আপনার কর্মচারীরা তাদের সব সমস্যার কথাগুলো আপনার কাছে এসে খুলে বলে এবং আপনি তাদের সাথে মিলে তা সমাধান করার চেষ্টা করে থাকেন। সব মিলিয়ে, কাজের ক্ষেত্র হয়ে উঠে আনন্দময়।
কিন্তু এতকিছুর পরও যদি আপনার কর্মচারীরা চাকরি ছেড়ে চলে যায়, তার মানে হল মুক্ত দুয়ার নীতি থাকুক বা না থাকুক, আপনার যা যা জানা দরকার আপনার কর্মচারীরা আপনার তার সবটুকু বলছে না। আপনার কর্মচারীরা ভাবতে পারে এমন ৭টি বিষয় এবং সেইসাথে এতে আপনার কী করণীয় তা এখানে তুলে ধরা হল।
আপনি তাদেরকে কম বেতন দিচ্ছেন।
এই বাক্যটি সত্যি কিনা সেই ব্যাপারে আপনি কী নিশ্চিত? যখন আপনি আপনার কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়েছেন, তখনই কিন্তু তাদের দক্ষতা, চাহিদা এবং মার্কেট চাহিদা অনুযায়ী তাদের সাথে সমঝোতা করে বেতন নির্ধারণ করেছিলেন। তখন সেটি ঠিক ছিল, এখনও কী তা প্রযোজ্য? হয়ত আবার হয়ত বা না।
সমাধান? মার্কেটের দিকে নজর দিন। যদি দেখেন যে অন্য জায়গায় তাদের আরো অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি তাদেরকে কম বেতন দিচ্ছেন। অথবা যদি দেখেন একজনের স্থলাভিষিক্ত করতে গিয়ে আরেকজনকে আনতে যদি আপনার বেশি অর্থের দরকার হয়, তাহলে আপনি প্রথমজনকে কম বেতন দিচ্ছেন।
আপনি কখনও তাদের আইডিয়াগুলো শোনেন না।
আপনি একজন আইডিয়াবাজ মানুষ। কোম্পানি শুরু করা, কর্মচারী নিয়োগ এবং তাদের চাকরি – সবই আপনার আইডিয়াতে করা, এটা সত্যি। কিন্তু আপনি তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছিলেন কারণ তাদেরকে এবং তাদের আইডিয়াও আপনার দরকার ছিল। আপনি কী আসলেই তাদের কথা শুনছেন? শোনা মানে হল তাদের আইডিয়াগুলোকেও বিবেচনায় নেওয়া।
সমাধান? আপনি যে তাদের কথা শুনছেন তা দেখানোর জন্য তাদের আইডিয়ার ফলে কত লাভ হবে তা নিয়ে গবেষণা করে দেখুন (বা তাদেরকেই গবেষণা করে দেখতে বলুন)। হয়ত এভাবে আপনি ভাল কিছু পেয়েও যেতে পারেন।
আপনার কাউকে বহিষ্কার করতে হবে।
সহকর্মীদের খারাপ (বা অদক্ষ) আচরণ যখন বসরা উপেক্ষা করে তখন সেটা অন্য কর্মচারীরা ভাল চোখে নেয় না। এর ফলে অফিসে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়, কাজের গতি কমে যায় এবং কর্মপ্রবাহ থমকে যায়।
সমাধান? অদক্ষদের বহিষ্কার করুন।
আপনার একজন ক্লায়েন্টকে বাদ দিতে হবে।
সব ক্লায়েন্টদেরকেই কষ্ট করে যোগাড় হয় এবং তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে অন্য নতুন ক্লায়েন্ট যোগাড় করার চেয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক ধরে রাখাটাই সহজতর। তবে বেশিরভাগ ব্যবসারই অন্তত একজন ক্লায়েন্ট থাকেই যে কিনা যা টাকা দেওয়া হচ্ছে তার থেকে বেশিই কাজের আবদার করে বসে যার ফলে তা ব্যবসার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্য ক্লায়েন্টদের চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটায়।
সমাধান? কোন ক্লায়েন্টরা নাছোড়বান্দা তা আপনার কর্মচারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন। কোন ঐক্যমত্য হলে, সেই ক্লায়েন্টকে ধরে রাখাটা যুক্তিযুক্ত কিনা তা যাচাই করে দেখুন।
আপনি একজন সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপক (Micro Manager)।
আপনার ব্যবসায় যা কিছু হচ্ছে তার সবকিছুর ব্যাপারে আপনি কী ওয়াকিবহাল? মনে হতে পারে আপনি একজন ভাল নেতা, তাই না? কিন্তু তা ভুল। আপনার কর্মচারীদের যা করার কথা তা তাদেরকে করতে দিন। আপনি থাকবেন উপরের স্তরের মানুষ হিসেবে।
সমাধান? যোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে কাজ করতে দিন। হতে পারে এর জন্য আপনাকে কয়েক সপ্তাহ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।
আপনি একটু বেশিই গা-ছাড়া স্বভাবের।
আপনি হয়ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপকের ঠিক বিপরীত কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি পুরোপুরি দোষশূণ্য। কী হচ্ছে যে ব্যাপারে যদি আপনার ধারণা না থাকে, আপনি যদি নির্দেশনা ও মতামত দিতে না পারেন এবং কোন কিছু না জানার কারণে আপনি যদি সুদূরপ্রসারী কিছু ভাবতে না পারেন, তাহলে বললেই হয় আপনি একটু বেশিই গা-ছাড়া স্বভাবের।
সমাধান? আপনার প্রত্যক্ষ প্রতিবেদন সহকারে নিয়মিত (সাপ্তাহিক!) একক সভার আয়োজন করুন। কীভাবে কি হচ্ছে না নিয়ে হয়ত আপনার বেশি না ভাবলেও চলবে তবে কোথায় কী হচ্ছে তা আপনার জানতে হবে।
আপনার আত্মীয়রা বেশ যন্ত্রণাদায়ক।
আপনার জীবনসঙ্গী যে কিনা শুধুমাত্র দেখার করার কথা বলে অফিসে তিন ঘন্টা কাটিয়ে যায় এবং এরই মধ্যে সবার কাজের দুর্নাম করে বেড়ায় যাতে কর্মচারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে – এটি মোটেও কাজের কিছু না। আপনার সন্তান (প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে এমন) যাকে আপনি ভিপি বানিয়েছেন সে কিন্তু আপনার কাজ করে দিয়ে যেতে পারবে না। হয়ত ভবিষ্যতে সে পারবে, তবে রক্তের সম্পর্ক থাকলেও কাউকে তাড়াহুড়ো করে প্রমোশন দিয়েও তেমন একটা লাভ হয় না।
সমাধান? অন্য কর্মচারীদের আপনি যেভাবে দেখেন অফিসে আপনার আত্মীয়দেরকেও ঠিক সেভাবেই দেখুন। যদি তারা কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে তাদের লাগাম টেনে ধরুন বা তাদেরকে সসম্মানে বিদায় দিয়ে দিন। যদি আপনার কোন আত্মীয় যে কিনা আপনার অফিসে কাজ করে না কিন্তু শুধু শুধু এসে ঘুরে যায়, তখন চিন্তা করে দেখুন তার জায়গায় আপনার কোন কর্মচারীর জীবনসঙ্গী হলে, ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখতেন? যদি উত্তর হয় না-সূচক, তাহলে আপনার জীবনসঙ্গীরও অফিসের বাইরে থাকা উচিত।
কর্মচারীদের সাথে কথা বলা, নিজের আচরণের দিকে খেয়াল রাখা এবং কোথায় কী হচ্ছে সে ব্যাপারে অবগত থাকলে আপনার ব্যবসায় অন্য মানুষেরাও কাজ করতে চাইবে। এবং তা ব্যবসার জন্যই শুভ হবে।