অসাধারণ পেশাগত সম্পর্ক কিন্তু সাধারণ কাজ করার মাধ্যমেই গড়ে উঠে।

পেশাগত সাফল্য সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এখনও অনেকের কাছে ব্যবসায় সাফল্য আর জীবনের সাফল্যের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে এবং এই ভিন্ন অর্থ থাকার দরকার রয়েছে।

তবে একটি ব্যাপার ধ্রুব সত্যঃ সত্যিকারের সাফল্য যা বিভিন্ন পর্যায়ে বিরাজমান এবং সুসম্পর্ক তৈরি করা ছাড়া তা অর্জন করা অসম্ভব। অন্যদের প্রতি বিনয় আর সম্মানসূচক আচরণ ব্যতীত সত্যিকারের সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। আপনার হয়ত বিপুল সম্পদ থাকতে পারে কিন্তু আপনি বিনয়ী না হলে আপনাকে কিন্তু একাই পড়ে থাকতে হবে। এজন্য যারা অসাধারণ ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তারা যা করেন তা হল,

. কথা শোনে

কোন এক গ্রাহক  বিরক্তি প্রকাশ করল, কোন এক বিক্রেতা নিম্ন মানের সেবার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা প্রকাশ করল, কোন এক বন্ধু সময় না কাটানোর অভিযোগ তুলল। মাঝে মাঝে, যাই ঘটুক না কেন এবং যেই দোষী থাকুক না কেন, কাউকে না কাউকে কথা শুনতেই হয়। তারা সমালোচনা বা গালাগাল মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে কারণ তারা জানে যে তারা তা সহ্য করতে পারবে এবং তারা এটাও জানে যে হয়ত অন্য পক্ষ তা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। এতে কথা শোনার চেয়ে সেই ব্যক্তিটির নিঃস্বার্থতা প্রকাশ পায় এবং এরকম কাজই একটি ভাল সম্পর্কের ভিত গড়ে দেয়।

 

. বলার আগেই এগিয়ে আসে

বলা হলে হয়ত অনেকেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। অনেক কম মানুষই আছেন যারা বলার আগেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে আর সামান্য সাহায্যই বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যারা অন্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে তারা বুঝতে পারে কখন কার সাহায্যের প্র্য়োজন। এবং তখনই তারা সাহায্য করতে এগিয়ে যায়, “আমি কী আপনাকে সাহায্য করতে পারি?” এরকম সাধারণভাবে তারা সাহায্য করে না। এর পরিবর্তে তারা সাহায্যের জন্য কী কী করতে পারে তা নিয়ে কাজ করে যাতে কোন ধরনের আপত্তি তাদেরকে উচ্চারণ করতে না হয়। এভাবে তারা অন্যের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে থাকে কারণ তারা অন্যদের ব্যাপারে যত্নশীল।

 

. জিজ্ঞেস করা হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়

সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ফেস ভ্যালু আসলে অমূল্য। অনেক সময় যে প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন তা না করে মানুষ ভিন্ন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে থাকে। কোন স্থানীয় কলেজে অধ্যাপনা করা নিয়ে আপনার সহকর্মী হয়ত আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে; কিন্তু প্রকারান্তে সে চাইছে তার জীবনকে কীভাবে ভিন্ন পথে নেওয়া যায় সে ব্যাপারে কথা বলতে। আপনি কীভাবে একটি সফল ব্যবসা গড়ে তুললেন সে ব্যাপারে আপনার কোন কর্মচারী আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে;  তবে তার আসল উদ্দেশ্য হল নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কিছু উপদেশ ও প্রেরণা নেওয়া। অনেক সহজ প্রশ্নের আড়ালে একটি বড় প্রশ্ন থেকেই যায় যা আর জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠে না। যারা অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তারা প্রশ্নের আড়ালে কী থাকতে পারে তা নিয়ে ভাবে যাতে তারা সবকিছুর উত্তর দিতে পারে।

 

. ভারসাম্য বজায় রাখে

বহির্মুখী আর ক্যারিশম্যাটিক মানুষেরা বেশ মজার হয় কিন্তু সব সময়ের জন্য নয়। যখন কোন বড় চ্যালেঞ্জ চলে আসে বা পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়, তখনও কিছু কিছু মানুষ তাদের নিজস্বতা ব্যক্ত করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। সুসম্পর্ক স্থাপনকারীরা জানে কখন মজা করতে হয়, কখন সিরিয়াস হতে হয়,কখন সবার সামনে আসতে হয় আর কখন নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়, আবার কখন দায়িত্ব নিতে হয় আর কখন অন্যদেরকে অনুসরণ করতে হয়। সুসম্পর্কের অনেক দিক থাকে এবং এসব দিকগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এমন ব্যক্তিরা পরিস্থিতি ও অন্যদের সাথে মানিয়ে নিয়ে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে।

 

. তারা যে অন্যদের নিয়ে ভাবে তার প্রমাণ দেয়

যারা সুসম্পর্ক তৈরি করে তারা শুধু অন্যদেরকে নিয়ে ভেবেই ক্ষান্ত হয় না, বরং তারা সে অনুযায়ীর কাজও করে থাকে। এর একটি সহজ পন্থা হল অপ্রত্যাশিত প্রশংসা করা। সবাই অপ্রত্যাশিত প্রশংসা পছন্দ করে। এতে অন্যরা নিজেদের ব্যাপারে খুশি থাকে এবং বুঝতে পারে যে আপনি তাদেরকে নিয়ে ভাবেন। প্রতিদিন সময় নিয়ে আপনার পরিচিত কারো জন্য ভাল কিছু করুন, কোন দায়বদ্ধতা থেকে করতে হবে এমন নয়, আপনি ভাল কিছু করতে পারেন বলেই তা করুন। এভাবে আপনার সম্পর্কের উন্নতিও হবে।

 

. তাদের খারাপ আচরণের ব্যাপারে অবগত থাকে

প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ বা কথার জন্য বেশিরভাগ মানুশই ক্ষমা চেয়ে নেয়। অনেক মানুষ আছে যারা বলার আগে বা অন্য কেউ লক্ষ্য করার আগেই অকপটে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সুসম্পর্কের অন্যতম মূল ভিত্তি হল দায়িত্ব নেওয়া। যারা অন্যদের উপর না চাপিয়ে নিজেই দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং তার ব্যাখ্যা দেয় – এমন ব্যক্তিদেরকেই মানুষেরা তাদের জীবনের ধরে রাখতে চায় কারণ তারা কোন ভুলকে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা হিসেবে না দেখে বরং শিক্ষা হিসেবে দেখে।

 

. দেয় বেশি বেশি, কিন্তু প্রতিদান পায় মাঝে মধ্যে

একটি সুসম্পর্ক দুই পক্ষের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে। আর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এর মানে হল এমন মানুষদের সাথে যংযুক্ত হওয়া যারা মেন্টর হতে পারবে, তথ্য বিনিময় করতে পারবে এবং অন্য সংযোগ তৈরিতে সাহায্য করতে পারবে , এক কথায়, সম্পর্কটি আপনাকে কিছু না কিছু প্রদান করবে। যে সুসম্পর্ক গড়তে চায়, সে তার চাওয়া নিয়ে না ভেবে সে কীভাবে অন্যদেরকে কিছু দিতে পরবে তা নিয়ে ভাবে। কোন কিছু দেয়ার মাধ্যমেই একটি সত্যিকারের এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয়। যেকোন সম্পর্কে নিজেকে নিয়ে না ভেবে অন্যদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয় এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সমমনাদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে। সময়ের সাথে সাথে ভাল সংযোগ এবং ভাল সম্পর্কও তৈরি হয়ে যায়।

 

. বার্তা প্রেরণকারী এবং বার্তা –দুটোকেই প্রাধান্য দেয়

ক্ষমতা বা খ্যাতির কেন্দ্রবিন্দুতে যারা থাকেন, তাদের কাজ, পরামর্শ এবং আইডিয়াগুলো গুরুত্বের সাথেই দেখা হয়। আমরা নামীদামী ব্যক্তিত্বদের কথা আগ্রহ নিয়ে শুনে থাকি। কিন্তু যারা সুপরিচিত নয়, তাদের কথায় আমরা তেমন গুরুত্ব সহকারে শুনি না। এটি দুর্ভাগ্যজনক। যারা স্মার্ট, তারা সব সময় সোর্সের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাবের দিকে না তাকিয়ে, তাদের তথ্য, পরামর্শ বা আইডিয়াগুলোকে নিজ গুণে বিচার করে থাকে। বার্তা প্রেরণকারীকে পছন্দ নয় বলে যে বার্তাটাকেও এড়িয়ে যেতে হবে এমন কাজ তারা করে না। যারা সুপম্পর্ক বজায় রাখে তারা জানে যে একটি ভাল বার্তা সব সময়ের জন্যই ভাল এবং তা যার কাছ থেকেই আসুক না কেন। এবং তারা এটাও জানে যে ভাল মানুষ সব সময়ের জন্য ভাল তা তারা যেই স্ট্যাটাসেরই হোক না কেন।

 

. তাদের শুরুটা হয় অল্প থেকে এবং তারা অল্প নিয়েই খুশি থাকে

কারো সাথে অতি সামান্য জিনিসের অজুহাতেও সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, যেমন ধরুন আপনার পরিচিত মুদি দোকানদারের সাথে যার দোকান থেকে আপনি নিয়মিত কেনাকাটা করে থাকেন, হয়ত বাজার করা ফাঁকে  তার সাথে আপনি অল্প কিছু আলাপ সেরে নিলেন আর এই অল্প আলাপের সুবাদেই এক সময় আপনাদের মাঝে একটি ভাল সম্পর্ক তৈরি হবে। যতই ক্ষণিকের সম্পর্ক হোক না কেন, সব সম্পর্কই মূল্যবান। যারা সুসম্পর্ক গড়তে চায়, তারা সবাইকে একই ভাবে মর্যাদা দিয়ে থাকে।

Similar Posts

Leave a Reply