উৎসাহ তৈরি করুন
আলাপচারিতার মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন দেওয়া যায়না। এটা কোন শ্রেণীকক্ষের লেকচার নয় বা কোন পার্টিতে বন্ধুদের আলাপ নয়। আপনাকে সবার সামনে উপস্থিত হতে হবে। আপনি ভালভাবে উপস্থাপন না করলে দর্শকরা তাদের মনযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে এক মূহুর্তও দেরি করবে না। তাই ভালভাবে আপনার বিষয়বস্তু তুলে ধরুন, দরকার হলে হাস্যরস ব্যবহার করে তা মজার করে তুলুন। আপনার কন্ঠকে বলিষ্ঠভাবে ব্যবহার করুন। হাত দিয়ে ব্যাখ্যা করুন। তোতলাবেন না। একই স্বরে কথা না বলে ভিন্ন ভিন্ন স্বরে কথা বলুন। যদি আপনি ভাল প্রেজেন্টার হতে চান, আপনাকে সেই অনুযায়ী দক্ষ হতে হবে।
গল্প বলুন
প্রতিটি ভাল প্রেজেন্টেশনে একটি গল্প থাকে। আর গল্পের শুরু ও শেষ থাকে। গল্পের মাধ্যমে আবেগকে ছোঁয়া যায়। কতিপয় বুলেট পয়েন্টের চেয়ে একটি জীবন্ত গল্প অনেক বেশি কার্যকর। দর্শকদের সাথে গল্পের মাধ্যমে কথা বলুন। আপনার পণ্যের ব্যবহারকারীদের গল্প তুলে ধরুন। আপনার পণ্য তাদের জীবনে কী ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, আপনার পণ্য ব্যবহার করে তারা কতটুকু উপকৃত হয়েছে – তা বিস্তারিতভাবে বলুন। আপনার পণ্যের ফিচারের ফিরিস্তি তুলে ধরার চেয়ে অন্যের চোখে আপনার পণ্যের অবস্থান কোথায় তা বলা শ্রেয়।
কাঠামো তৈরি করুন
গল্প বলা ঠিক আছে কিন্তু তার একটা কাঠামো থাকতে হবে। আপনার বার্তাকে কয়েকটি মূল খন্ডে ভাগ করুন যেগুলো একই বিষয়বস্তুর সাথে জড়িত থাকবে। মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরার জন্য আপনি অন্য যেকোন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করতে পারেন যা আপনার গল্পের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
আপনার অডিয়েন্সকে জানুন
প্রেজেন্ট করার আগে আপনার দর্শক কারা তা জেনে নিন। এই বিষয়গুলো আগেই জেনে নিতে পারেনঃ কতজন দর্শক থাকবে, আপনার আগে এবং পরে কে কোন বিষয়ের উপর প্রেজেন্ট করবে, অনুষ্ঠানের কোন নিজস্ব থিম আছে কিনা, যারা দর্শক থাকবে তাদের স্ট্যাটাস কি রকম, তারা কী কী বিষয় নিয়ে আগ্রহী ইত্যাদি।
আপনি আপনার দর্শকদের উদ্দেশ্যেই কথা বলবেন, তাই তাদের পছন্দগুলো আগে জেনে নিলে আপনার কাজে আসবে।
অনন্য কিছু করুন যা আপনাকে স্মরণীয় করে রাখে
সব ইভেন্টেই একের অধিক প্রেজেন্টার থাকে এবং বেশিরভাগই থাকে বোরিং। তাই আপনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। যদি আপনি হাস্যরসে দক্ষ না হয়ে থাকেন, তাহলে তা করতে যাবেন না। দর্শকদের সামনে মরা কৌতুক না বলাই ভাল। ক্রিয়েটিভ কিছু করুন তবে অপ্রাসঙ্গিক কিছু করতে যাবেন না।
সহজভাবে তুলে ধরুন
প্রেজেন্টেশনের লক্ষ্য হল কোন একটি বা একাধিক বিষয় তুলে ধরা এবং এটা বোঝানো কেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ জানতে চায় সমস্যাটি কী এবং আপনি কীভাবে তা সমাধান করতে পারবেন। এজন্য বিষয়বস্তু সহজ রাখাই উত্তম। একটি ১০ মিনিটের প্রেজেন্টেশন থেকে দর্শকরা কমপক্ষে ৩টি জিনিস মনে রাখতে পারে, তাই আপনার প্রেজেন্টেশনকে এমনভাবে সাজান যেন তা আপনার বিষয়বস্তুর রেশ রেখে যায় দর্শকদের মাঝে।
সারাংশ করুন
প্রেজেন্টেশনের মূলমন্ত্র যদি হয় ঘুরে ফিরে একই কথা বারবার বলা তাহলেতা বোরিং হবে এটা নিশ্চিত, তবে প্রেজেন্টেশনে আপনি যে মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করবেন সেগুলো সারাংশ আকারে একের বেশি বার রিপিট করতে পারেন যাতে দর্শকদের মাথায় বিষয়টি প্রবেশ করে। তবে তা বোরিংভাবে না করে মজা করে করার চেষ্টা করুন।
ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করুন
প্রেজেন্টেশনে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার এখন বিরক্তির পর্যায়ে পৌঁছেছে। কেউই চায় না বড় স্ক্রিনে পয়েন্ট আকারে লেখা পড়তে। দর্শকদেরকে আকৃষ্ট করতে হবে ভিজ্যুয়ালি। বুলেট পয়েন্টের স্থলে ছবি ব্যবহার করুন এবং সেই ছবিকে ব্যাখ্যা করুন দর্শকদের সামনে। প্রতিটি ছবিতে আসলে কী বলতে হবে তা আপনার ভালভাবে জানা থাকতে হবে। যদি ছবির সাথে কোন কথা যোগ করতে চান, তাহলে তা সংক্ষেপে বড় হরফেলিখুন। আপনাকে যা বলতে হবে তা যদি আপনি ভুলে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে হাতে একটি চিরকুট রাখুন যাতে আপনি কিওয়ার্ড লিখে রাখতে পারেন – যেগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে।
অনুশীলন করুন
আপনার আসল প্রেজেন্টেশন হওয়ার আগে তা আপনার বন্ধু বা পরিচিতদের সামনে একবার হলেও অনুশীলন করে নিন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্রেজেন্টেশন কেমন যাবে এবং আপনার পরিচিতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফিডব্যাকও পেয়ে যাবেন। আপনার পরিচিতদের বলুন কড়াভাবে আপনার প্রেজেন্টেশনের মান যাচাই করার জন্য যাতে যখন আপনি অনেক মানুষের সামনে তা করবেন তাতে যেন কোন ভুলের সুযোগ না থাকে। খুব ভালো হয় যদি আপনি একাধিকবার মুল প্রেজেন্টেশন এর জায়গায় দাড়িয়ে অনুশীলন করতে পারেন।
সময় মেনে চলুন
আপনি যে প্রেজেন্টেশন ৫ মিনিটে করতে পারেন তার জন্য হয়ত আপনাকে বেশি সময় দেওয়া হতে পারে। আপনি ভাবতে পারেন যে আপনি সময় মেনে চলতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে স্টেজে সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে গিয়ে সময় বেশি লেগে যেতেই পারে। তাই সময় মেনে চলার চেষ্টা করুন। স্টপওয়াচ দিয়ে অনুশীলন করুন। আপনি সময়ের মধ্যে প্রেজেন্টেশন সমাপ্ত করতে পারলে ভাল তা না হলে দীর্ঘ প্রেজেন্টেশনে দর্শকদের মনোযোগ না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।