আমাদের সবসময় স্মার্ট লক্ষ্যের বিষয়ে শেখানো হয়েছে যা নির্দিষ্ট, পরিমেয়, অর্জন করা সম্ভব, বাস্তবসম্মত, এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু এর মধ্যে কোথায় যেন কিছু একটা বাদ পড়ে গেছে। এটা আসলে লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যপার।
একবার ভেবে দেখুন, বছরের শুরুতে আমরা সারা বছরের জন্য যে লক্ষ্য ঠিক করি, তার ৭০%ই অর্জন করা সম্ভব হয় না। কারন আমরা সাধারনত যা করা উচিত সেটিকে লক্ষ্য হিসেবে নেই, যেটা প্রয়োজন তাকে লক্ষ্য বলে মেনে নেই না।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার আছে এবং তা হলো – আপনি আসলে আপনার লক্ষ্য নিয়ে কতটা যত্নশীল? যখন আপনাকে বলা হয়, ২০১৩ সালে আপনার অধিক লাভবান হওয়া উচিত, তখন আপনি কি অনুভব করেন? অথবা এ বছরে আপনার ওজন কমাতে হবে? আপনার “করা উচিত” লক্ষ্যেগুলোর মাঝে থাকে লজ্জা, ব্যর্থতা, এবং হতাশা ধরণের আবেগ।
যখন আমি আমার ক্লায়েন্টদের সঙ্গে বার্ষিক লক্ষ্যেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করি তখন আমি সাধারণত তাদের মধ্যে আতঙ্কগ্রস্থ অবস্থা অনুভব করি। যখন আমরা তাদের এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করি, তারা তখন উত্তর দেয় “আমি জানি না আমি এটা করতে পারব কিনা?”, বা “আমি গত বছর ব্যবসা বৃদ্ধি করতে না পারায় নিজেকে দোষী বলে মনে করছি”, বা “এটা অর্জন করার মত মনে হয় না”। তারা লক্ষ্য সম্পর্কে ভাল কিছু বোধ করে না।
যদিও রাজস্ব বিষয়ক লক্ষ্যগুলো প্রত্যেক ব্যবসার ক্ষেএে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবুও শুধুই বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিকোণ থেকে এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে সব সময় ভালো ফল পাওয়া যায় না। যারা শুধু নাম্বারের পিছনে ছোটেন, এটা তাদের জন্য সব সময় খুব একটা প্রেরনাদায়ক হয় না, বরঞ্চ এটা একটা সময় ভয় তৈরি করে।
তাই কিভাবে আমরা তাদের লক্ষ্যগুলোকে নতুনভাবে সাজিয়ে আরো আকাঙ্খিত এবং সম্ভাবনাময়ী করে তুলতে পারি?
ধরুন আপনি ২০১৩ সালে রাজস্ব ২০% বৃদ্ধির জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এবার ভাবুন এটা আপনার কাছে কি ধারনা নিয়ে আসে? এর মানে কি এই যে আপনি একজন সহকারী নিয়োগ করবেন এবং পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় ব্যয় করবেন? অথবা এর মানে কি এই যে আপনি একটি নতুন পণ্য চালু করতে করতে আপনি টাকা পাবেন? এটা হয়ত বোঝায় আপনার ব্র্যান্ডটি গৃহস্থলীর একটি প্রয়োজনীয় অংশ হতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে?
সব সময় আপনার লক্ষ্যের পিছনের আবেগময় ব্যপারগুলুর দিকে খেয়াল রাখুন। যখন আপনি ফলাফল অর্জনের কথা ভাবেন তখন আপনার কি মনে হয়? আপনার ভাল অনুভূতিগুলোর উপলব্ধি এটি আপনাকে “লজ্জাজনক আবশ্যক” থেকে “আনন্দদায়ক চাওয়া” তে স্থানান্তর করবে। এতে আপনার সাফল্লের সম্ভাবনা আরও অনেক বাড়িয়ে দেয়। বাস্তবে দেখা যায় যে, ইতিবাচক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নেতিবাচক আবেগের বহিঃপ্রকাশের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
যেহেতু আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর্যায়ে নতুন ৫ টি উপাদান যোগ করছেন, কিছু কিছু ব্যপারে খেয়াল রাখবেন। খেয়াল করুন আপনি কি অনুভব করেন যখন আপনি একটি ফিনান্সিয়াল লক্ষ্য অর্জন করতে চান, অর্জন করতেই হবে এটা মনে করেন কিনা। এখানে আপনার শারীরিক প্রতিক্রিয়ার উপর বেশি মনোযোগ দেন। আপনার হৃদয়ে উত্তেজনা অনুভব করছেন কিনা? আপনার কি কোন উত্তেজনা অনুভব হচ্ছে কিনা? এই ব্যাপারটাই আমরা খেয়াল করতে বলছি। যদি আপনার অন্তত একটিও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা না হয় তবে বুঝতে হবে যে আপনি এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যের বিষয়ে যথেষ্ট গভীরে যেতে পারেন নি।
১। একটি প্রকৃত চ্যালেঞ্জ খুঁজে বের করুন।
আপনার লক্ষ্যকে বাধ্যতামূলক এবং অর্জনযোগ্য করুন – এবং অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। দুর্দান্ত মেধার অধিকারিদের চ্যালেঞ্জ প্রয়োজন, অন্যথায় একঘেয়েমি পেয়ে বসবে এবং আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে। আপনার লক্ষ্যের ব্যপারগুলো লিখে রাখুন।
২। ইতিবাচক মানসিক সংযোজক স্থাপন করুন।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ইতিবাচক ব্যপারগুলো আপনাকে সাহায্য করবে, তার একটি তালিকা তৈরি করুন। অস্পষ্ট নেতিবাচক বিবৃতি থেকে দূরে থাকুন যেমন “আমি কম চিন্তা করে থাকি।” যে ব্যপারগুলো আপনার মাঝে উত্তেজনা তৈরী করে, তার সন্ধান করুন। অবশ্যই কিছু একটা ফলাফল আসবে যেটা আপনাকে উদ্দীপনা্র সঙ্গে সানন্দে সামনে নিয়ে যাবে।
৩। একটা দৃশ্যগত উপস্থাপনা তৈরি করুন।
আপনার ফলাফল প্রতিনিধিত্বকারী ইমেজ তৈরি করুন। যদি রাজস্ব বৃদ্ধি বলতে বোঝায় আপনি একটি পরিবার অবকাশ গ্রহণ করতে পারেন তাহলে একটি আদর্শ অবকাশ বোঝায় এমন একটি ছবি তৈরি করুন। যদি আপনার কাঙ্খিত গ্রাহকদের পেতে আপনাকে কোন পরিবেশকদের সাথে কাজ করতে হয়, তবে আপনি এ অনুযায়ী লোগো বা দোকানের সম্মুখ তৈরি করুন। আপনার ইমেজটি কেটে একটি পোস্টার তৈরি করুন এবং ঝুলিয়ে দিন।
৪। সবার সাথে আলোচনা করুন।
কোম্পানির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যারা (প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, পরিবেশক, সরবরাহকারী ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ, তাদেরকে লক্ষ্য নির্ধারণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করুন। তাদেরকে এ প্রক্রিয়াতে যুক্ত হতে সাহায্য করুন। তাদের জিজ্ঞেস করুন এই লক্ষ্য দিয়ে তারা কি বুঝেন এবং তারা এতে নতুন কিছু যোগ করতে পারেন কিনা?
৫। ধৈর্যধারণ করুন।
সবকিছুর পরে, আপনাকে এই লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় দিতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধাপ গুলো বুঝতে সময় নিন এবং কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের ফলাফল নিয়ে ভাবুন। এটা প্রতিদিন করুন। আপনি ফলাফল নিয়ে যত উৎসাহী হবেন আপনার কাজে তত আগ্রহ তৈরি হবে। অবশ্যই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিটি ধাপ চিহ্নিত করুন। উদ্যোক্তারা প্রায়ই এটা ভুলে জান। সফলতা উদযাপন করুন। যে শক্তি আপনাকে এই কাজে এনেছে, তাকে আবার নিয়ে আসেন। লক্ষ্য অর্জনের সাথে একে যুক্ত করুন।
[অনুবাদ]
Bah darun to