কাজ করার জন্য যোগ্য লোক পাওয়া গেলে কাজে সাফল্য নিশ্চিত। কিন্তু ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। এ ব্যাপারে আপনাকে কী করতে হবে তা জেনে নিন।
যোগ্য কর্মীরাই একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মূল কারিগর, বিশেষ করে এ কথাটি বাস্তব সত্য যেকোন উঠতি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। টেকনলজি সেক্টরে একজন ভাল সফটওয়্যার ডেভেলপার চাইলে বড় ধরনের ভুল ছাড়াই ১০টারও বেশি গড়পড়তার সফটওয়্যার বানাতে পারেন। আবার হতে পারে আপনার কোন বিশেষজ্ঞ দল নেই, কিন্তু তারপরও আপনার প্রতিষ্ঠান সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এটা তখনই সম্ভব যখন আপনার থাকবে এমন কর্মচারী যারা আসলেই তাদের কাজ বুঝতে পারে এবং এর উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম। উঠতি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাকে নিলে ভাল হবে, কে আসলেই কাজ করতে পারবে আর কে পারবেনা- এসব নিয়ে খুব একটা বাছবিচার করার সুযোগ পায় না।
আর এ জন্য ভাল কর্মচারীদেরকে আপনার দলে নিয়ে আসতে হলে, এই ৫টি বিষয় খেয়াল রাখুনঃ
১. আপনার বর্তমান কর্মচারীদের সাহায্য নিন
প্রতিভাবানরাই অন্য প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারে। আপনি হয়ত আপনার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত ব্যক্তিদের মাঝে একটি রেফারেল প্রোগ্রাম চালু করতে পারেন যার ফলে তারা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যদেরকে সুপারিশ করবে। এর ফলে যা হবেঃ আপনার বর্তমান কর্মচারীদের উপর আপনার আস্থা প্রতিফলিত হবে এবং আপনার কর্মচারী দ্বারা সুপারিশকৃত ভাল প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।
২. বিশেষজ্ঞ নয়, উদ্দীপ্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিন
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি একটু বেশিই মাতামাতি করে থাকে। আপনার প্রতিষ্ঠানের সেরা পারফর্মাররা হবেন স্মার্ট, করিৎকর্মা এবং উদ্ভাবনী মানসিকতা সম্পন্ন – এই তিনটি গুণাবলীর সাথে পূর্ব অভিজ্ঞতার তেমন কোন সম্পর্ক নেই। যে সেক্টরে আপনার প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে থাকে, সেই সেক্টরের ব্যাপারে জানে এমন কাউকে নিয়োগ না দিয়ে, অন্য কাউকে নিয়োগ দিন যে সেক্টরটির ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নয় কিন্তু তার মাঝে বেশ কিছু ভাল আইডিয়া আছে।
এটির তুলনা হতে পারে ক্রীড়াবিদদের সাথে। ক্রীড়াবিদরা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে এক অবস্থান থেকে আরেক অবস্থানে যেতে সক্ষম। এমনও ক্রীড়া সংস্থা আছে যারা পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই খেলোয়াড়দের বাছাই করে তাদেরকে দিয়েই সামনে এগিয়ে যায়। আর এভাবেই সেরা ক্রীড়াবিদরা তৈরি হয়ে থাকে।
আপনার দলের সদস্যরা যাতে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন উচ্চতায় যেতে পারে সেই সুযোগ থাকা উচিত, তারা আগে কী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে সেটার পুনরাবৃত্তি না করাটাই শ্রেয়।
৩. অধিক চাপের মাঝেও উচ্চ মান বজায় রাখুন
দ্রুত বৃদ্ধির ফলে কিছু সমস্যাও তৈরি হয়, যার মধ্যে অন্যতম হল দ্রুত পরিসরে বাড়ছে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। উঠতি প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি বড় সমস্যা কারণ তারা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার চাহিদের চেয়ে সময়ের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে। আপনার প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধি দিয়ে ভাল প্রতিভাকে আকৃষ্ট করুন, কিন্তু নিয়োগের ব্যাপারে আপনার প্রতিষ্ঠানে বৃদ্ধির বিষয়টি যেন প্রভাব না ফেলে। একজন খারাপ কর্মচারী পুরো দলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. প্রার্থীদের সাবলীলতার পরীক্ষা নিন
আপনার কর্মচারীদেরকে একে অপেরের সাথে কথা বলায় সাবলীল থাকতে হবে হোক সেটা সিইও এর সামনে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিন। যখন সব মিলিয়ে একজন প্রার্থীকে ভাল মনে হবে, তখন তার একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা নিন। প্রার্থীর মার্কেটিং দক্ষতা কতখানি তার চেয়ে সে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশে কতটা মানানসই তা যাচাই করে দেখুন। সাধারণত আপনি মনে এই প্রশ্নটি করতে পারেনঃ আমি কী এর সাথে কখনও চায়ের কাপে আলাপ জমিয়ে তুলতে পারব? যদি দেখেন যে সেমি-ক্যাজুয়াল পরিস্থিতিতে আপনি তাদের সাথে সাচ্ছ্বন্দ্য নন, তাহলে তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না করাটাই শ্রেয়।
৫. তাদেরকে আপনার প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে সুবিধা দিন
নিম্নমুখী অর্থনীতিতে নিয়োগদাতারা ভাবতে পারেন যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবকিছুই তাদের মুষ্টিবদ্ধ। যদি চাকুরি প্রত্যাশীরা আপনাকে অভিভুত করতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা অন্য কোন সুযোগকে না করে দেবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এমনটাই হয়ে থাকে। তাদেরকে যোগ্য প্রতিভা হিসেবে সম্মান দিন এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সুবিধা ও উন্নয়নের সুযোগ করে দিন। এর ফলে যা হবে তা হল তারা আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথেই কাজ করতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠবে।